শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে বুঝবেন যে ১০ টি লক্ষণ দেখে

শরীরে আয়রনের ঘাটতি যদিও একটি উপদ্রব হিসেবে শুরু হয়, পরবর্তীতে এর থেকে অ্যানেমিয়া বা রক্তাল্পতার মত মারাত্মক অবস্থা হতে পারে। প্রতিদিন বিভিন্নভাবে আমাদের শরীর থেকে আয়রন বের হয়ে যাচ্ছে। তাই এর থেকে প্রতিকারের উপায় ও এর চিকিৎসা সম্মন্ধে জানা জরুরি।
আয়রনের ঘাটতি তখনই ঘটে যখন শরীরে খনিজ আয়রন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না, যা হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য দায়ী। হিমোগ্লোবিনের অনুপস্থিতি আপনার পেশী এবং টিস্যুগুলিকে সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে দেয় না যার ফলস্বরূপ রক্তাল্পতা দেখা দেয়।
তাই আমাদের আজকের লেখার বিষয় কিভাবে আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে বুঝবেন। আশা করি পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।

১. শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে অস্বাভাবিক ধরনের ক্লান্তি লাগে

ক্লান্তি, আয়রনের ঘাটতির একটি খুব সাধারণ লক্ষণ। এর কারণ আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন নামক একটি প্রোটিন থাকে যা ফুসফুস থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন বহন করার জন্য দায়ী।যখন আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিনের অভাব হয় তখন এটি আমাদের পেশী এবং টিস্যুতে কম অক্সিজেনের অবদান রাখে যার ফলে ক্লান্তি আসে।

২. শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়

আমাদের রক্তে যে হিমোগ্লোবিন থাকে তা আমাদের ত্বককে স্বাস্থ্যকর ও গোলাপি রং দেয়। আয়রনের অভাব থাকলে ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যায়। চোখ, ঠোঁট, আঙুলের নখ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম লাল হয়, তাহলে বুঝতে হবে আয়রনের অভাব আছে।

৩.আয়রনের অভাবে শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হয়

শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা আয়রন ঘাটতির আরেকটি লক্ষণ। আয়রন যেহেতু অক্সিজেন সরবরাহ করে তাই এর ঘাটতি হলে শরীরে সব জায়গায় অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয় না তখন শরীর বেশি বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করার চেষ্টা করতে থাকে যার ফলে শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা অনুভব হয়।

৪. মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যথা করা

আয়রনের অভাবে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন হতে পারে। মস্তিস্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে রক্তনালীগুলি ফুলে যায় এবং চাপ সৃষ্টি করে যা মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের দিকে নিয়ে যায়। এছাড়াও, আয়রনের ঘাটতিযুক্ত লোকেদের হালকা মাথাব্যাথা এবং মাথা ঘোরা থাকতে পারে। যখন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হ্রাস পায় তখন শরীর অক্সিজেনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, যার ফলে এই শারীরিক লক্ষণগুলি দেখা দেয়। মাথা ঘোরা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব থেকে বা হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলির দুর্বল অক্সিজেনেশনের ফলে নিম্ন রক্তচাপ থেকে উদ্ভূত হতে পারে।

৫. বুকে ধড়ফড়ানি বা অস্বস্তি লাগা

অনিয়মিত হার্টবিট, যা হার্টের ধড়ফড়ানি হিসাবেও পরিচিত, আয়রনের ঘাটতির আরও একটি লক্ষণ হতে পারে। হিমোগ্লোবিন কম থাকলে হৃৎপিণ্ডকে শরীরের বাকী অংশে অক্সিজেন বহন করার জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এতে অস্বাভাবিক হার্টবিট বা আপনার বুকে অনিয়মিতভাবে দ্রুত প্রহার করছে এমন অনুভূতি হতে পারে।

৬. চুল ও ত্বকের ক্ষতি

চুল এবং ত্বক আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও বিভিন্ন ট্যিসুতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। যখন ত্বক এবং চুলে আয়রনের অভাব হয় তখন তখন সেগুলো শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এছাড়া আয়রনের ঘাটতি থাকলে চুল পরে যায়।

৭. জিহবা ও মুখের পরিবর্তন

আমাদের মুখের ভিতরে একবার নজর দেওয়া আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রচুর সংকেত দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জিহ্বা ফোলা ফোলা, ফুলে উঠা বা বর্ণহীন দেখা দিলে এটি আয়রনের ঘাটতির ইঙ্গিত। এছাড়া মুখ শুকিয়ে যায় এবং ঠোঁটের কোনায় ঘা হয়।

৮. নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া

ভঙ্গুর নখগুলি আয়রনের ঘাটতির খুব কম সাধারণ লক্ষণ যা রক্তাল্পতার পরবর্তী পর্যায়ে প্রদর্শিত হয়। এই অবস্থার নাম কোয়েলোনাইকিয়া। নখগুলি অস্বাভাবিক পাতলা হয়ে যায় এবং উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে, সমতল বা এমনকি অবতল আকারে পরিণত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নখ ভঙ্গুর এবং চিপ হতে পারে বা সহজেই ভেঙে যেতে পারে।

৯. পায়ে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া

একটু হাঁটলেই পায়ে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। আর হাঁটতে ইচ্ছা করে না। রাতে এবং সন্ধ্যার দিকে সমস্যা বেশি হয়।

১০. পেট ব্যথা এবং পস্রাবের সাথে রক্ত আসা

আয়রনের কমতি থাকলে পেট ব্যথা ও পস্রাবের সাথে রক্ত আসে। যারা ব্যায়াম করে বা দৌড়াদৌড়ি করে তাদের এ সমস্যা বেশি হয়।

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হওয়ার আগেই প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান যেমন কাচা কলা, পেয়ারা, কচুশাক ইত্যাদি। আর প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

Leave a Comment